শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী, বহরা, মনতলা, শাহজাহানপুর, সুরমা, তেলিয়াপাড়া, ভান্ডারুয়া, এক্তিয়ারপুর, জালুয়াবাদ, নোয়াপাড়া, জগদীশপুর এলাকায় উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন সহস্রধীক কৃষক। এসব এলাকায় টমেটোর চাষ করে কৃষকের ভাগ্যবদল হয়েছে। প্রথমে ২/১ জন কৃষক উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর চাষ স্বল্পপরিসরে শুরু করে লাভবান হওয়ায় এখন শত শত কৃষক টমেটোর চাষ করছেন। বর্তমানে টমেটো চাষ এসব এলাকার অর্থকরী ফসল হিসেবে স্থান পেয়েছে। মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে টমেটো চাষি আলমগীর হোসেন জানান, তিনি এ বছর ৫০ শতক জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। সর্বমোট তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তার ধারণা ওই টমেটো ক্ষেতটি ৫ লক্ষ টাকা বিক্রি হবে। আলমগীর শুরুতেই ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি শুরু করেন। তিনি ওই জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের টমোটো চাষ করে এ সফলতা পেয়েছেন। ওই এলাকার সহস্রধিক কৃষকের মধ্যে আলমগীর একজন সফল সব্জি চাষি। মাধবপুরে এসব অঞ্চলে কৃষকরা মুলত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টমেটোর চাষাবাদ করে থাকে। প্রথমে যে সব কৃষক ক্ষুদ্র পরিসরে টমেটোর চাষ করতেন দিনে দিনে তারা বাণিজ্যিক পর্যায়ে টমেটোর চাষাবাদ শুরু করেছেন। এতে কৃষকরা হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। টমেটো চাষাবাদ করে এখন পর্যন্ত কোনো কৃষক লোকসানে পরেনি বরং স্বাবলম্ভী হয়েছে কৃষকরা। টমেটো দেখতে সোনালী বর্নের রং অনেকটা লাল আপেলের মত। মাধবপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় টমেটোর পাইকারী ক্রেতারা ক্ষেত চুক্তি টমেটো ক্রয় করে পিক-আপ ভ্যান, ছোট ও বড় ট্রাকসহ বিভিন্ন বাহনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। টমেটো চাষী আলমগীর তার অভিজ্ঞতা বণর্না করে জানান, ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করে অর্থের অভাবে বেশী দুর এগুতে পারেননি তিনি। এর পর খুব কষ্টেই তার সংসার চলতে থাকে। এক পর্যায়ে গত ৮/১০ বছর পূর্বে তিনি টমেটোসহ অন্যান্য সব্জি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তখন থেকেই উচ্চ ফলনশীল জাতের সব্জির চাষ করে আলমগীর। প্রথমে সব্জি চাষাবাদে আশানুরুপ ফলন না হলেও ধীরে ধীরে টমেটোসহ সব্জির চাষ পদ্ধতি নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি। এখন নিজেই নার্সারীতে চারা উৎপাদন করে টমেটোসহ লাউ, ঝিঙ্গা, তরমুজ, বাধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, ও শিমের চাষাবাদ করে স্বাবলম্ভী হয়ে উঠেছেন। স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে তার সংসারে। টমেটো সাধারণত শীত কালীন ফসল। আগে আমাদের এলাকার চাষীরা শীত কালে দেশী জাতের টমেটো চাষ করতেন। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে এলাকার কৃষকরা গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষ করছেন। টমেটো একটি সুস্বাদু সব্জি হওয়ায় এ এলাকার টমেটোর কদর রয়েছে সারা দেশে। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকায় এ বছর মাধবপুরে উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগীতা করা হয়। চলতি বছর মাধবপুরে টমেটোর অবাদের লক্ষ্য মাত্রা ৩২০ হেক্টর নির্ধারন করা হলেও আবাদ হয়েছে প্রায় ৪শ হেক্টর জমিতে। মাধবপুরের উচুঁ ভূমির মাটি আগাম জাতের টমেটোর খুবই উপযোগী।